logo

সতর্ক, সাবধানী মোদী

  • April 5th, 2024
Suman Nama

সতর্ক, সাবধানী মোদী

সুমন চট্টোপাধ্যায়

সাম্প্রতিক কালে নরেন্দ্র মোদীকে আমি এতটা নিষ্প্রভ কখনও দেখিনি।গতকাল কোচবিহারের রাসলীলা ময়দানে যাঁকে দেখলাম, ১৪০ কোটি ভারতীয় প্রত্যেকে তাঁকে চেনে, যে ভাষণটি শুনলাম, তাতে পরিচিত মোদীকে খুঁজে পেলামনা।

সতর্ক, সাবধানী, সব আছে অথচ ঝাঁঝটা নেই, মোটের ওপর এই ভাষণ শুনে প্রধানমন্ত্রীর অসংখ্য ভক্তজনের গা গরম হওয়ার কথা নয়। অথচ ঠিক বিপরীতটি হওয়ার কথা ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার মোদীর টানে কোচবিহারে যেন কোটালের বান ডেকেছিল।চাঁদিফাটা রোদ থোড়াই কেয়ার করে সভাস্থল পর্যবসিত হয়েছিল জন-অরণ্যে।

সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাবর্তনের যাত্রা পথের দু’পাশে দৃষ্টিসুখলোভী স্বতঃস্ফূর্ত নগরবাসী হাজারে হাজারে জমায়েত হয়েছিলেন।টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকা কোনও প্রধানমন্ত্রীর জন্য জন-গণেশের এমন অবিশ্বাস্য আকুল উদ্বেলতা আমি অন্তত কখনও প্রত্যক্ষ করিনি। মঞ্চের পডিয়ামে স্টান্স নিয়ে প্রথম বল থেকেই ফ্রন্টফুটে ছক্কা মারার এর চেয়ে আদর্শ পরিবেশ আর কীই বা হতে পারে? অথচ নরেন্দ্র মোদী যতক্ষণ উইকেটে থাকলেন, খচাখচ ভরা হুয়া গ্যালারিতে একটি বলও পাঠালেননা। বরং তিনি ভাষণ শুরুই করলেন মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে, এ যাত্রায় রাসলীলার মাঠে তাঁর আর জনতার মাঝে দেওয়াল তোলার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য।তাতেই জনতার উত্তেজনা বোধহয় থিতিয়ে গেল।

তারপর জগৎসভায় ভারতের ছবি কীভাবে দ্রুত লয়ে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছে, কী রকম শক্ত হাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গড়ে তিনি দেশকে তৃতীয় বৃহত্তম আর্থিক শক্তি হওয়ার পথ সুগম করছেন শোনালেন সেই বহুচর্চিত মোদী-চালিসা। রাজ্য সরকার এবং শাসক তৃণমূলের যেটুকু সমালোচনা করলেন পুরোটাই ‘প্রো-ফর্মা।’ এই সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্প লাগু করতে দেয়না, গরীবের প্রাপ্য টাকা লুট করে, সড়ক, রেল, বিমানবন্দর, পরিকাঠামোগত যে কোনও প্রকল্পে বাধা দেয়। তবু রাজ্যের এমন আত্মঘাতী অসহযোগিতা সত্ত্বেও বিবিধ কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের গরীবও উপকৃত হয়েছে, তাঁরা মাথার ওপর ছাদ পেয়েছেন, বাড়িতে নল বাহিত জল এসেছে, বিনামূল্যে রেশনও পাচ্ছেন। চাটনি আর পাঁপড় বলতে আলতো করে সন্দেশখালি আর আগামী পাঁচ বছরে ঘোটালাবাজদের বিরুদ্ধে আরও শক্ত ব্যবস্থা। মোটামুটি এই। মেনুতে আগাগোড়া নিরামিষ।

ভোটের প্রচার শুরুর আগে বার চারেক মোদী রাজ্যে ঘুরে গিয়েছেন বিবিধ কেন্দ্রীয় প্রকল্প উদ্বোধন করতে, প্রতিবার জনসভাও সম্বোধিত করেছেন। তুলমুল্য বিচারে সেই ভাষণ কোচবিহারের ভাষণের চেয়ে অনেক চড়া সুরে বাঁধা ছিল, সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের জ্বলন্ত ইস্যু তিনি প্রত্যাশিতভাবেই সদ্ব্যবহার করেছিলেন। তাহলে কোচবিহারে এত দ্বিধা কীসের?

একটি সম্ভাব্য কারণ, অতীতের ভুল-ভ্রান্তি থেকে তিনি শিক্ষা নিয়েছেন, বুঝতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে টার্গেট করে আক্রমন শানানো হলে তা বুমেরাং হতে পারে।

ফলে এবার তিনি অতি মাত্রায় সাবধানী, দলের বাকি নেতারা যা খুশি বলুক তিনি আর ভুল করেও মমতাকে ‘দিদি, ও দিদি’ বলে ব্যঙ্গ করবেননা। এমনকি বুয়া-ভাতিজার দুর্নীতি, তৃণমূলের পারিবারিক শাসন মায় মুসলিম সন্তুষ্টিকরণ নিয়েও তিনি কার্যত নীরব। হয়ত প্রধানমন্ত্রী স্থির করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যেহেতু তিনি কেজরীবাল বা হেমন্ত সোরেন বানাতে পারেননি বা বানাতে চাননি তাই বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়াই মঙ্গলের। রাজ্যবাসী টের পেয়ে গিয়েছেন এই বিশেষ বিষয়টি নিয়ে দশ বছর ধরে তাঁরা ক্রমাগত গর্জন করে গিয়েছেন, এক ছটাক বর্ষণও হয়নি। ‘কে বলো হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?

আবার এমনও হতে পারে প্রধানমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন কোচবিহার তাঁর দলের নিশ্চিত আসন, এখানে তাঁর বুড়ি ছোঁয়া ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। কোচবিহার ঠিকই করে ফেলেছে কাকে জেতাবে। এটা জলঘোলা করার জায়গা নয়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *